যুগাচার্য শ্রীল প্রভুপাদ
যা খুব বড় তা কাছ থেকে ঠিকমত দেখা যায় না, তা যথাযথভাবে দর্শন করতে হলে দূর থেকে দর্শন করতে হয়। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য, আমাদের পরমারাধ্য গুরুদেব শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ আজকের পৃথিবীর এত কাছে রয়েছেন যে অধিকাংশ মানুষই এখনও চিনতে পারে নি তিনি কে—তিনি কত মহৎ। কালের প্রভাবে তিনি মানুষের দৃষ্টি থেকে যত দূরে যাবেন, ততই তারা তার মহিমা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে। | শ্রীল প্রভুপাদ নিজে ছিলেন তৃণাদপি সুনীচেন তরােরিব সহিষ্ণুনা” আদর্শের মূর্ত প্রতীক। তিনি নিজের মহিমা কখনও কারাে কাছে প্রকাশ করেন নি। তার অচিন্ত্য অবদানের সমস্ত কৃতিত্ব, তিনি তার গুরুদেব শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর ও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকেই সব সময় দিয়েছেন। কিন্তু যাদের চোখ আছে তারা ঠিকই তাকে চিনতে পেরেছে। তবে তাদের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। তাই যারা তাকে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে, তারা চায় তার মহিমা জনসাধারণ হৃদয়ঙ্গম করুক, কেননা তাহলে তাদের কল্যাণ হবে। মহাপুরুষকে চিনতে পারলে, তাঁর দিব্য গুণাবলী সম্বন্ধে উপলব্ধি করতে পারলে তা কিছু পরিমাণে অর্জন করা যায়।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ভবিষ্যদ্বাণী করে গেলেন, “পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম | সর্বত্র প্রচার হইবে মাের নাম।” সে প্রায় পাঁচশ বছর আগের কথা। তখন সাধারণ মানুষ জানতই না পৃথিবীটা কত বড়—তাতে সমস্ত নগর ও গ্রাম রয়েছে। আর সেই সমস্ত নগরে ও গ্রামে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী প্রচারের তাে তারা কল্পনা পর্যন্ত করতে পারত না। পাঁচশ বছর কেন, আজ থেকে পঁচিশ বছর আগেও মানুষের কাছে ছিল তা কল্পনারও অতীত। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাই তঁার ভবিষ্যদ্বাণী কখনও ব্যর্থ হ্বার নয়। যিনি সর্বশক্তিমান এবং সারা জগতের অধীশ্বর, তার পক্ষে তাে কোনাে কিছুই অসম্ভব নয়। পক্ষান্তরে, তারই ইচ্ছায় সবকিছু সম্পাদিত হয়। তাই তিনি যখন ইচ্ছা করেছেন সারা পৃথিবীর প্রতিটি নগরে এবং গ্রামে কৃষ্ণভক্তির প্রচার হােক, তখন তা হবেই। তবে সেই কার্যটি তিনি নিজে সম্পন্ন করতে চান নি। তা করার জন্য তিনি পাঠিয়েছেন তার এক অতি অন্তরঙ্গ পার্ষদকে, এবং সেই মহান ব্যক্তিটি হচ্ছেন জগদ্গুরু শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ।
| এই পুস্তিকাটিতে শ্রীল প্রভুপাদের জীবনালেখ্য সংক্ষেপে প্রদান করা হয়েছে। শ্রীল প্রভুপাদের একজন আমেরিকান শিষ্য। সংস্বরূপ দাস গােস্বামীর লেখা “প্রভুপাদ” নামক তাঁর দিব্য জীবনচরিত সম্বলিত গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করে এই পুস্তিকাটি সংকলিত হয়েছে। সংক্ষিপ্ত হলেও এই পুস্তিকাটিতে শ্রীমান্ কৃশানু শ্ৰীল প্রভুপাদের জীবনালেখ্যর যে পরিলেখাটি তুলে ধরেছে, তা খুব সুন্দর হয়েছে। আশা করি, এই পুস্তিকাটির মাধ্যমে শ্রীল প্রভুপাদ সম্বন্ধে জানতে ঐকান্তিকভাবে আগ্রহী হয়ে পাঠকেরা “প্রভুপাদ” এবং তার সম্বন্ধে অন্যান্য যে সমস্ত গ্রন্থাবলী রয়েছে, সেগুলি পাঠ। করতে আগ্রহী হবেন।এই পুস্তিকাটির নামকরণ সম্বন্ধে অনেকের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জেগেছিল, শ্রীল প্রভুপাদকে যুগাচার্য' বলে সম্বােধন করা হলে এই যুগের পূর্বতন মহান আচার্যদের অমর্যাদা করা হবে কি না। | তার উত্তরে আমার মনে হয়েছিল, এই যুগের যুগধর্ম হরিনাম সংকীর্তনের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী সার্থক করে যিনি সারা পৃথিবীকে হরিনামের বন্যায় প্লাবিত করেছেন, তিনিই হচ্ছেন এই যুগের প্রকৃত আচার্য। তাঁর অবদান পূর্বতন আচার্যদের অবদান থেকে স্বতন্ত্র নয়। পক্ষান্তরে, তা তাদের অবদানের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত এবং তাদের অবদানেরই চরম পরিণতি। পুর্বপুরুষেরা যেমন কোন বিশেষ বংশধরের. মহিমা কীর্তিত হলে প্রসন্নই , তেমনই এই যুগের সমস্ত আচার্যেরা শ্রীল প্রভুপাদের অনবদ্য অবদানের জন্য তাকে ‘যুগাচার্য' উপাধিতে ভূষিত করা হলে অবশ্যই অপ্রসন্ন হবেন না। সর্বোপরি, শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদকে এই উপাধিতে ভূষিত করা হলে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকেই যথাযথভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।


0 Response to "যুগাচার্য শ্রীল প্রভুপাদ গন্থটি Download করুন.PDF"
Post a Comment