ভক্তবৎসল শ্রীনৃসিংহদেব
সারাজগতে কৃষ্ণনাম প্রচার করাই ইসকনের লক্ষ্য। যদিও কলিযুগের যুগধর্ম হরিনাম সংকীর্তন এবং জগৎমঙ্গলকর পন্থা হল কৃষ্ণভক্তি অনুশীলন, তবুও কলিযুগের আসুরিক মানুষেরা কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের বিরােধী। তারা চায় কৃষ্ণনাম প্রচার বন্ধ করে দিতে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যখন কৃষ্ণনাম সংকীর্তন প্রবর্তন করলেন, তখন নবদ্বীপের স্মার্ত ব্রাহ্মণেরা। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়ে নবদ্বীপে হরিনাম বন্ধ করার জন্য তৎকালীন নদীয়ার শাসনকর্তা চাঁদকাজীর কাছে আবেদন পেশ করেছিলেন। চাঁদ কাজীও গুণ্ডা পাঠিয়ে মায়াপুরের শ্রীবাস ঠাকুরের বাসভবনের অঙ্গনে সংকীর্তনকারী ভক্তদের উৎপীড়ন করতে লাগলেন। তারপর নাগরা পিটিয়ে হরিনাম সংকীর্তন বন্ধের ঘােষণা জারি হয়েছিল। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও নিত্যানন্দ প্রভু সে সংবাদ পেয়ে চাঁদকাজী সরকারের বিরুদ্ধে আইনঅমান্য আন্দোলন শুরু করলেন। লক্ষ লক্ষ লােক মশাল জ্বালিয়ে হরিনাম করতে করতে চাঁদকাজীর প্রাসাদে এসে পৌছলেন। চাঁদকাজী ভয়ে লুকিয়ে ছিলেন। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে, তিনি বেরিয়ে এসে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সমাদর করলেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কাজীকে যখন প্রশ্ন করলেন, আপনার নির্দেশ অমান্য করে ভক্তরা হরিনাম করছে, আর আপনি কেন কিছুই প্রতিবাদ করছেন না? উত্তরে চাঁদকাজী মহাপ্রভুকে বলেন, “নিমাই, তােমাদের হরিনাম কীর্তনে আমি আর কখনই বাধা দেবাে না। কেননা আমি ভয়ে ভীত হয়ে ঘুমাতে পারিনি।” চাঁদকাজী চোখ বড় বড় করে বলতে লাগলেন, ‘এক দেবতা এসেছিল। তার মুখ সিংহের মতাে, শরীরটা মানুষের মতাে। তার হাতে ছিল বড় বড় নখ। সে আমার বুকে নখের আঁচড় লাগিয়ে ধমক দিয়ে বলল, “ভক্তদের কীর্তন যদি বন্ধ করি তবে তাের বংশ নিপাত করব।” তারপর | সে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার নখের দাগ এখনও বুকে রয়েছে।' সবাই বুঝলেন ভক্তদের রক্ষার জন্য ভগবান নৃসিংহদেব, যিনি অত্যাচারী অসুর হিরণ্যকশিপুর কবল থেকে ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করেছিলেন, তিনিই চাঁদকাজীকে সাবধানবাণী শুনিয়েছেন। | কলিযুগের আসুরিক লােকদের উৎপাত থেকে ভগবানের যে অবতার সর্বদা জাগ্রত থেকে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণপূর্বক ভক্তদের রক্ষা করেন, তিনি হচ্ছেন শ্রীনৃসিংহদেব। | ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে মার্চ রাতদুপুরে গােলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শ্রীমায়াপুর ইসকন মন্দিরে আক্রমণ করেছিল ৩৫জন ডাকাত। প্রভুপাদের বিগ্রহ ও রাধারাণীর বিগ্রহ তারা অপহরণ করে। প্রভুপাদ-বিগ্রহ উদ্ধার করা গেলেও রাধারাণীর বিগ্রহকে আর দেখা গেল না মন্দির কক্ষে। সেদিনের মন্দিরে আক্রন্দনময় বিভীষিকা ভক্তদের মর্মাহত করেছিল। জিবিসির পক্ষ থেকে সমাধান কল্পে শ্রীমায়াপুর ইসকন মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হলেন শ্রীশ্রীউগ্রনৃসিংহদেব। সময়টি ছিল ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ের শেষদিক। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর হরেকৃষ্ণ আন্দোলনে ভক্তদের সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আসুরিক শক্তির সঙ্গে মােকাবিলা করতে হয়। আসুরিক শক্তির কাজটাই হল, ভক্তদের উৎপীড়ন করা এবং হরিনাম প্রচার বন্ধ । করা। সর্বত্রই ভক্তিবিঘ্ন বিনাশক শ্রীনৃসিংহদেবই সুরক্ষা দান করেন। সেজন্য সব মন্দিরে ভক্তরা নৃসিংহ প্রার্থনাই নিত্য গীত করে থাকেন।

0 Response to " ভক্তবৎসল শ্রীনৃসিংহদেব গন্থটি Download করুন.PDF"
Post a Comment