৩.ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য -পর্ব ০৩

Krishner Das

1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

 জয় শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ।হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।[ হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হুইন ]-শ্রীল প্রভুপাদ

হরে কৃষ্ণ

🙏হরে কৃষ্ণ🙏জপ করুন সুখী হউন

৩.ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য -পর্ব ০৩

৩.ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য -পর্ব ০৩

 

৩.ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য -পর্ব ০৩

৩.ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য -পর্ব ০৩ মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদিতে সমস্ত পদার্থ গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর নাভি নামক একটি বিন্দুতে ঘনীভূত ছিল,এই পদার্থের নাম ‘প্রধান’।ইহা চিন্ময় পদার্থ বা বিপরীত পদার্থ বা বিজ্ঞানের ভাষায় এন্টিকার্ক দ্বারা তৈরী পদার্থ বলা যাইতে পারে।বিজ্ঞানীরা বলেছেন বিপরীত কণিকা দিয়ে গঠিত পদার্থের বা মহাবিশ্বের আচরণ আমাদের মহাবিশ্বের চাইতে পৃথক হবে।আমি যে‘প্রধান’নামক বিপরীত পদার্থের উল্লেখ করেছি,তা আমাদের বৈজ্ঞানিক কোন নীতিমালা মানবে না,চিন্ময় পদার্থ চিন্ময় জগতের ভিন্ন নীতিমালা মানিয়া চলবে,কিন্তু বিজ্ঞানীরা সেই জগতের নীতিমালা জানে না।‘প্রধান’নামক এই বিপরীত পদার্থ থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে,‘প্রধান’যেহেতু এই জগতের কোন নীতিমালা মেনে চলে না সেজন্য বিজ্ঞানীরা বলছেন সৃষ্টির আদিতে সমস্ত বৈজ্ঞানিক বিধিগুলি ভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল।সৃষ্টির শুরুতে বৈজ্ঞানিক বিধিগুলি ভঙ্গ হওয়ার কারন হইল‘প্রধান’নামক যে চিন্ময় পদার্থ থেকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে,তা এ জগতের কোন নীতিমালা মেনে চলে না। 

‘প্রধান’ চিন্ময় বা বিপরীত পদার্থ।ইহা এই জড় মহাবিশ্বের কোন নীতি মেনে চলে না।সেজন্য ‘প্রধান’-এর আয়তন আমাদের মহাবিশ্বের কোন পদ্ধতির দ্বারা মাপা সম্ভব নয়,‘প্রধান’আমাদের কাছে অপ্রকাশিত বা অব্যক্ত,এর আয়তন আমাদের জগতের নীতিতে শূন্য হবে।এজন্য বিজ্ঞানীরা বলছেন মহাবিশ্বের আয়তন সৃষ্টির শুরুতে শূন্য ছিল।প্রকৃত বিচারে ‘প্রধান’ কোন শূন্য পদার্থ নয় ইহা বিপরীত পদার্থ সেই জন্য ইহাকে সাধারণ পদ্ধতিতে মাপা সম্ভব নয়। মানুষের শরীরটি জড় পদার্থ অর্থাৎ এই মহাবিশ্বের পদার্থ,মানুষের মধ্যে যে আত্মা আছে তাকে বলা হয় চিন্ময় পদার্থ অর্থাৎ বিপরীত পদার্থ।এই চিন্ময় আত্মার প্রভাব আমরা অনুভব করিতে পারি কিন্তু যদি আমরা আত্মাকে আমাদের পদ্ধতি দ্বারা মাপতে চাই তবে সেটা সম্ভব নয়।তখন আমরা বলিব আত্মার কোন আয়তন নাই বা আয়তন শূন্য কিন্তু বৈদিক শাস্ত্র চিন্ময় জগতের নীতমালার সাথে পরিচিত,সেজন্য ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে আত্মার আয়তন একটি চুলের অগ্র্রভাগের দশ হাজার ভাগের একভাগ। আত্মার আয়তন সম্বন্ধে বেদে বলা হয়েছে 

বালাগ্রশতভাগস্য শতধা কল্পিতস্য চ। 

ভাগো জীবঃ স বিজ্ঞেয়ঃ স চানন্ত্যায় কল্পতে॥(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৫/৯) 

অনুবাদ কেশাগ্রকে শতভাগে ভাগ করিয়া তাহাকে আবার শতভাগে ভাগ করিলে তাহার যে আয়তন হয়,আত্মার আয়তনও ততখানি।

 কেশাগ্রশতভাগস্য শতাংশঃসদৃশাত্নকঃ। 

জীবঃ সূক্ষস্বরূপপোহয়ং সংখ্যাতীতো হি চিৎকণঃ॥(ভাগবত) 

অনুবাদ অসংখ্য যে চিৎকণা (আত্মা) রহিয়াছে,তাহার আয়তন কেশাগ্রের দশ সহস্র ভাগের এক ভাগের সমান ।একটি কেশাগ্রের দশ সহস্রভাগের একভাগ অর্থাৎ একটি চুলের দশ হাজার ভাগের একভাগ অর্থাৎ আত্মা অত্যন্ত ক্ষুদ্র শক্তি কণিকা যা ভগবানের অংশ।সুতরাং দেখা যাচ্ছে আত্মার আয়তন আছে,কিন্তু সেটা আমাদের এই জগতের কোন পদ্ধতি দ্বারা মাপা সম্ভব নয়।ঠিক সেরকম প্রধানের আয়তন আছে,কিন্তু সেটা বৈজ্ঞানিকেরা এই জগতের পদ্ধতি দ্বারা মাপতে পারে না।সেজন্য তারা বলছে সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্বের আয়তন শূন্য ছিল।কিন্তু প্রকৃতি বিচারে মহাবিশ্বের আয়তন শূন্য ছিল না। আমাদের এই শরীরটি জড় পদার্থ যতক্ষন এর মধ্যে আত্মা থাকে, ততক্ষণ ইহা জীবিত থাকে । যখন আত্মা দেহ ছেড়ে চলে যায়, তখন দেহ প্রানহীন জড় পদার্থে পরিণত হয় । আমাদের এই জড় শরীর সৃষ্টির জন্য চিন্ময় আত্মা দায়ী অর্থাৎ চিন্ময় বস্তুর প্রভাবে জড় পদার্থ সৃষ্টি হয় । মানব দেহ বিশ্লেষণ করলে মাটি, জল, আগুন, বাতাস, আকাশ (ইথার) পাওয়া যাবে । কিন্তু এই বস্তুগুলির সমন্বয় ঘটাইয়া মানব শরীর সৃষ্টি সম্ভব নয় কারণ এগুলো সকলেই জড় বা প্রাণহীন ইহাদের জীবন্ত কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা নাই । আম গাছে যতক্ষন আত্মা থাকে ততক্ষন ইহা আম তৈরী করতে পারে কিন্তু যখন আত্মা থাকে না তখন গাছ মৃত জড় পদার্থে পরিণত হয়, সেই কাঠ দ্বারা টেবিল বানানো যেতে পারে কিন্তু টেবিল থেকে আম গাছ বানানো সম্ভব নয় । সুতরাং জড় কোন বস্তুর সৃষ্টির পেছনে চিন্ময় আত্মার প্রভাব থাকতে হবে, চিন্ময় বস্তুর প্রভাব ছাড়া কোন কিছু সৃষ্টি সম্ভব নয় । আমাদের এই মহাবিশ্ব জড় বা প্রাণহীন এই জড় পদার্থ সৃষ্টি হয়েছে চিন্ময় বস্তুর প্রভাবে । ভাগবতে সেই পদার্থের নাম ‘প্রধান’ বলে উল্লেখ করেছে । চিন্ময় বস্তু থেকে যখন কোন জড় বস্তু সৃষ্টি হয় তখন একটি মাধ্যম প্রয়োজন হয় যেমন – আম তৈরীর জন্য আত্মার মাধ্যম হহল আমগাছ । মানব শরীর তৈরীর জন্য আত্মার মাধ্যম হল মানুষ, ঠিক সে রকম চিন্ময় বস্তু প্রধান হতে জড় বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টির জন্য একটি মাধ্যমের প্রয়োজন, সেই মাধ্যম হল অগ্নিদেব বা আগুন বা তাপমাত্রা মাধ্যম যেহেতু জড় অর্থাৎ এই জগতের বস্তু সেজন্য সেটাকে মাপা সম্ভব । ‘প্রধান’-এর উপর যখন তাপমাত্রা ক্রিয়া করে তখন এর পরিমান ছিল অসীম বা অনন্ত । বিজ্ঞানীরা সেটা বলেছেন সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্বের আয়তন ছিল শূন্য এবং তাপমাত্রা ছিল অসীম । প্রধানের উপর যখন অসীম তাপমাত্রা ক্রিয়া করে তখন প্রধান ক্ষোভিত বা বিস্ফোরিত হয়ে মহতত্ত্ব নামক জড় পদার্থের সৃষ্টি করে । পরবর্তীতে এই মহতত্ত্ব থেকে বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি হয় ।এই বিস্ফোরণকে বিজ্ঞানীরা হট বিগ ব্যাঙ্গ (ℍ𝕠𝕥 𝔹𝕚𝕘 𝔹𝕒𝕟𝕘) বা উত্তপ্ত মহাবিস্ফোরণ বলে । এর নাম বিগব্যাঙ্গ থিওরী (𝔹𝕚𝕘 𝔹𝕒𝕟𝕘 𝕋𝕙𝕖𝕠𝕣𝕪) । পরবর্তীতে এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে । চিন্ময় জগত সম্বন্ধে আলোচনার সারাংশ (𝔸 𝕓𝕣𝕚𝕖𝕗 𝕕𝕚𝕤𝕔𝕦𝕤𝕤𝕚𝕠𝕟 𝕒𝕓𝕠𝕦𝕥 𝕤𝕡𝕚𝕣𝕚𝕥𝕦𝕒𝕝 𝕎𝕠𝕣𝕝𝕕)

 ১। আমরা যে জগতে বাস করি তা ছাড়া আরো একটি জগত আছে এর নাম চিন্ময় জগত ।

 ২। চিন্ময় জগত জড় জগতের ৩ গুণ বড় ।

 ৩। চিন্ময় জগতকে বিজ্ঞানের ভাষায় বিপরীত জগত বলা যেতে পারে ।

 ৪। চিন্ময় জগতের সৃষ্টি বা ধ্বংস নাই ।

 ৫। চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ গ্রহের নাম ‘গোলকবৃন্দাবন’ এখানে ভগবান থাকেন । 

৬। চিন্ময় জগতের কালের কোন প্রভাব নেই, সেজন্য সেখানে কেউ মৃত্যু বরণ করে না ।

 ৭। আত্মা চিন্ময় জগত থেকে এসেছে ।

 ৮। চিন্ময় জগতে আলোর জন্য সূর্য বা চন্দ্রের প্রয়োজন নাই ।

 ৯। চিন্ময় জগত চিন্তামনি বা পরশ পাথর দ্বারা তৈরী ।

 ১০। চিন্ময় জগত সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের আংশিক ধারণা আছে ।

 বিজ্ঞানীদের ভাষায় এর নাম বিপরীত জগত । 

১১। কার্ক (ℚ𝕦𝕒𝕣𝕜) হল মৌল কণিকা ইহা দ্বারা মহাবিশ্ব গঠিত । 

১২। কার্ক থেকে বিপরীত কার্ক এবং বিপরীত কার্ক থেকে কার্ক তৈরী হতে পারে ।

 ১৩। ‘প্রধান’ হল চিন্ময় বা বিপরীত পদার্থ যা থেকে মহাবিশ্ব তৈরী হয়েছে ।

 ১৪। সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্বের আয়তন ছিল শূন্য এবং তাপমাত্রা ছিল অসীম । 

১৫। ‘প্রধান’-এর উপর যখন অসীম তাপমাত্রা ক্রিয়া করে তখন ‘প্রধান’ ক্ষোভিত বা বিস্ফোরিত হয় একে বিজ্ঞানীরা বিগব্যাঙ্গ (𝔹𝕚𝕘 𝔹𝕒𝕟𝕘) বা বৃহৎ বিস্ফোরন বলে । 

১৬। জড় জগত চিন্ময় জগতের বিপরীত প্রতিফলন এবং জড় জগত চিন্ময় জগতের নীচে অবস্থিত ।

 বৈদিক বিশ্বব্রাহ্মান্ড সৃষ্টি প্রনালী [𝕧𝕖𝕕𝕚𝕔 𝕔𝕠𝕟𝕔𝕖𝕡𝕥 𝕠𝕗 𝕔𝕣𝕖𝕒𝕥𝕚𝕠𝕟 𝕠𝕗 𝕨𝕙𝕠𝕝𝕖 𝕨𝕠𝕣𝕝𝕕] আমরা যে সৌর পরিবারে বসবাস করি এর সাথে আরো কিছু গ্রহ নক্ষত্র যোগ করিলে আমাদের ব্রাহ্মান্ড গঠিত হয় । এ রকম কোটি কোটি ব্রাহ্মান্ড সমন্বয়ে গঠিত হয় বিশ্বব্রাহ্মান্ড ।প্রতিটি ব্রাহ্মান্ডের আয়তন ভিন্ন রকমের । ভাগবতে বর্ননা করা হইয়াছে এই বিশ্বব্রাহ্মান্ড সৃষ্টি হয় চিন্ময় জগত থেকে আর আগে চিন্ময় জগত সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে । চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ গ্রহের নাম গোলক বৃন্দাবন । এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিত্য বা সর্বদা বর্তমান থাকেন অর্থাৎ এটা তার নিজের বাসস্থান বা ধাম । ভগবান কখনো তার নিজের ধাম ত্যাগ করিয়া কোথাও যান না, তবে যখন জড় জগতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তখন তিনি নিজের থেকে ছায়া কৃষ্ণ তৈরী করিয়া জড় জগতে পাঠান । বেদে উল্লেখ করা হইয়াছে ছায়াকৃষ্ণ এবং মূলকৃষ্ণ এক ও অভিন্ন উভয়ের শক্তি সমান। যখন মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় হয়, তখন কৃষ্ণ গোলক বৃন্দাবন থেকে সৃষ্টির পরিকল্পনা করেন এবং চিন্ময় জগতের নিচে গোলাকার বলের মত ফাঁকা জায়গা সৃষ্টি করেন । এই গোলাকার বলকে বলা হয় বিশ্বব্রাহ্মান্ডের গোলক। ইহার মধ্যে অনন্ত কোটি ব্রাহ্মান্ড সৃষ্টি হয় । জড় জগত বা মহাবিশ্ব সষ্টির কারন চিন্ময়জগত। সায়ম্ভূবতন্ত্রে চতুর্দশাক্ষর মন্ত্রের প্রভাব সম্বন্ধে শিব এবং পার্বতীর আলোচনায় তা প্রতিপন্ন হইয়াছে । সেখানে বলা হইয়াছে 

 চিন্ময়জগতের নিচে জড়জগত অবস্থিত  

নানাকল্পলতাকীণং বৈকুন্ঠং ব্যাপকং স্মরেৎ। 

অধঃ সাম্যং গুণানাঞ্চ প্রকৃতিঃ সর্বকারণম্।।(চৈতণ্য চরিতামৃত১/৫/১৮) 

অনুবাদ মন্ত্র জপ করিবার সময় সর্বদা চিজ্জগতের কথা স্মরন করা উচিত, যাহা বৈকুন্ঠলোকের অধোভাগে জড় সৃষ্টির কারণস্বরূপা প্রকৃতি অবস্থিত। এই শ্লোকে বর্ননা করা হইয়াছে চিন্ময়জগত (বৈকুন্ঠে লোকে) এর অধোভাগ বা নিচে জড় জগত অবস্থিত । বিশ্ব ব্রাহ্মান্ড সৃষ্টির ধারবাহিক বর্ননা ভগবতে বর্ননা করা হইয়াছে আমি এখানে অত্যন্ত সংক্ষেপে কিছু উল্লেখ করলাম । মহাবিশ্বের জন্য যে গোলক সৃষ্টি হইয়াছে সৃষ্টির অদিতে সেই গোলকের অর্ধেক জল দ্বারা পূর্ণ করা হয়। 

ব্রাহ্মান্ডের অর্ধেক জল দ্বারা পূর্ণ করিল

 জল ভরি’ অর্ধ তাঁহা কৈল নিজ-বাস।

 আর অর্ধে কৈল চৌদ্দভূবন প্রকাশ।।(চৈতণ্য চরিতামৃত১/৫/৯৮)

 অনুবাদ ব্রাহ্মান্ডের অর্ধভাগ জল পূর্ণ করিয়া তিনি সেইখানে তাঁহার নিজের আবাসস্থল তৈরী করিলেন এবং বাকি অর্ধাংশে চতুর্দশভূবন সৃষ্টি করিলেন। এখানে বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন করতে পারেন সৃষ্টির শুরুতে পানি আসিল কিভাবে, ইহা হইতে পারে না, ইহা অবাস্তব কিন্ত ভাগবত ইহার প্রতিবাদ করিয়া বলিয়াছে এই জল সাধারন জড় জগতের জল নয় । ইহা চিন্ময় জগতের অপ্রাকৃত জল এবং ইহা চিন্ময় জগত থেকে কৃষ্ণের নির্দেশে আসিয়াছে। মহাবিশ্বের গোলকের অর্ধেক যখন চিন্ময় জল দ্বারা পূর্ণ হয় তখন ইহাকে বলা হয় কারন সমূদ্র (𝕔𝕒𝕤𝕦𝕒𝕝 𝕠𝕔𝕔𝕒𝕟)। এই কারন সমূদ্র বিশ্বব্রাহ্মান্ড সৃষ্টির মূল কারন । এই কারন সমূদ্র চিন্ময় বস্তু, ইহা জড় বস্তু নয় । সেজন্য দেখা যাইতেছে, এই মহাবিশ্বের অর্ধেক জড় বা প্রাণহীন আর অর্ধেক চিন্ময় বা জীবন্ত।সুতরাং দেখা যাইতেছে এই মহাবিশ্বের পদার্থ এবং বিপরীত পদার্থের পরিমান সমান অর্থাৎ শক্তি (𝕡𝕠𝕤𝕚𝕥𝕚𝕧𝕖 𝕗𝕠𝕣𝕔𝕖) এবং বিপরীত শক্তি (𝕒𝕟𝕥𝕚 𝕗𝕠𝕣𝕔𝕖) সমান, সেজন্য উভয়ের যোগফফল শূন্য। এইজন্য বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে শক্তির পরিমান 𝟘(শূন্য)বলিয়া থাকেন। যখন কারন সমূদ্র জল দ্বারা পূর্ণ হয় তখন গোলক বৃন্দাবনের কৃষ্ণের শরীর হইতে একটি ছায়াকৃষ্ণ বাহির হইয়া কারন সমূদ্রে প্রবেশ করেন। এই ছায়া কৃষ্ণের নাম মহাবিষ্ণু যিনি কিছুদিন এই চিন্ময় জলে যোগনিদ্রায় (অপ্রাকৃত নিদ্রা)থাকেন।

 মহাবিষ্ণু বা হিরন্ময় একহাজার দিব্য বছর জলে থাকে

 হিরন্ময় স পুরুষঃ সহস্রপরিবৎসরান্। 

অন্ডকোশ উবাসাপ্সু সর্বসত্ত্বোপবৃংহিতঃ।(ভাগবত ৩/৬/৬)।

 অনুবাদ হিরন্ময় নামক বিরাট পুরুষ একহাজার দিব্য বৎসর ব্রহ্মান্ডের জলে বাস করিয়াছিলেন এবং সমস্ত জীবেরাও তাঁহার সঙ্গে শায়িত ছিল । এই শ্লোকে বর্ননা করা হইয়াছে, মহাবিষ্ণু শক্তি ১০০০ দিব্য বছর বা ৩৬৫০০০০ বছর কারন সমূদ্রে যোগনিদ্রায়(অপ্রাকৃত নিদ্রা) ছিলেন । তারপর তাঁহার শরীর হইতে কোটি কোটি ব্রাহ্মান্ডের বীজ বুদবুদ আকারে বাহির হয় এই বুদবুদগুলি পরবর্তীতে প্রতেকটি একটি করিয়া পূর্ণাঙ্গ ব্রাহ্মান্ডে পপররিনত হয়। 

কারন সমূদ্রে বুদবুদের আকারে ব্রাহ্মান্ড সৃষ্টি

 যঃ কারণার্ণবজলে ভজতি স্ম যোগ-নিদ্রামনন্তজগদন্ডসরোমকূপঃ।

 আধারশক্তিমবল্যম্ব্য পরাংস্বমূর্তি গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।। (ব্রহ্ম সংহিতা ৫/৪৭)

 এখানে ব্রহ্মাজী বলিয়াছেন, আমি সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি, যিনি তাঁহার অংশাবতার মহাবিষ্ণুরূপে যোগনিদ্রায় শায়িত এবং তাঁহার দিব্য শরীরের রোমকূপ থেকে অসংখ্য ব্রাহ্মান্ড বুদবুদ আকারে প্রকাশিত হইতেছে। এই শ্লোকে বর্ননা করা হইয়াছে, মহাবিষ্ণু কারন সমূদ্রে যোগনিদ্রায় শায়িত আছেন এবং তাঁহার দিব্য(চিন্ময়) শরীরের রোমকূপ থেকে বুদবুদ আকারে অসংখ্য ব্রহ্মান্ড প্রকাশিত হইতেছে ।পরবর্তীতে প্রতিটি বুদবুদের মধ্যে যে ফাঁকা জায়গা থাকে সেখানে একটা করে ব্রহ্মান্ড প্রকাশিত হয় । বুদবুদগুলি কারণ সমুদ্রের মধ্যে হাজার হাজার দিব্য বছর নিমজ্জিত অবস্থায় থাকে । ব্রহ্মান্ডগুলি সৃষ্টির পর কারণ সমুদ্রের কারণ বারীতে হাজার হাজার বছর নিমজ্জিত থাকে

 বর্ষপূগসহস্রান্তে তদন্ডুমুদকেশয়ম্

 কালকর্মস্বভাবস্থো জীবোহজবিমজীবয়ৎ ।। (ভাগবত ২/৫/৩৪) 

অনুবাদ এইভাবে সমস্ত ব্রহ্মান্ডসমূহ হাজার হাজার বছর কারণ সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত ছিল । তারপর সমস্ত জীবের ঈশ্বর তাহাদের মধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া সেগুলিকে পূর্ণরূপে সজীব করেন । এই শ্লোকে বর্ননা করা হইয়াছে ব্রহ্মান্ডগুলি সৃষ্টির পর কারণ সমুদ্রের কারণ বারীতে (জল) হাজার হাজার বছর নিমজ্জিত থাকে । বুদবুদগুলি কারণ সমুদ্রের মধ্যে গুচ্ছ আকারে অবস্থান করে অর্থাৎ একসাথে পুঁথি মালার মত থাকে । ব্রহ্মান্ডগুলি পুঁথিমালার মত একসাথে অবস্থান করে 

মত্তঃ পরতরং নান্যৎকিঞ্চিদস্তি ধনঞ্জয় ।

 ময়ি সর্বমিদং প্রোতং সুত্রে মণিগনা ইব ।। (গীতা ৭/৭)

 অনুবাদ হে ধনঞ্চয় (অর্জুন), আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই । সূত্রে যেমন মণিসমূহ গাঁথা থাকে, তেমনই সমস্ত বিশ্বই আমাতে ওতঃপ্রোতভাবে অবস্থান করে । এই শ্লোকে বর্ননা করা হইয়াছে ব্রহ্মান্ডগুলি গুচ্ছ আকারে থাকে । প্রতি গুচ্ছে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বুদবুদ থাকে, পরবর্তীতে এই বুদবুদগুলি যখন মহাশূন্যে গুচ্ছ আকারে ভাসমান হয় তখন একে ব্রহ্মান্ডপুঞ্জ বলে । বিজ্ঞানীরা এই ব্রহ্মান্ডপুঞ্জকে ছায়াপথ বা 𝕄𝕚𝕝𝕜𝕪 𝕨𝕒𝕪 বলে । বিজ্ঞানীরা প্রমান করেছে আমাদের নীহারিকাতে দৃশ্যমান তাঁরকার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার কোটি । আমি বিজ্ঞান পর্বে আলোচনা করেছি মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য যে সকল তত্ত্ব বিজ্ঞানীদের কাছে গ্রহণযোগ্য তারমধ্যে বুদবুদতত্ত্ব (𝔹𝕦𝕓𝕓𝕝𝕖 𝕋𝕙𝕖𝕠𝕣𝕪) অন্যতম । সংক্ষেপে বিজ্ঞানীদের বুদবুদ তত্ত্বের উল্লেখ করছি (𝔸 𝔹𝕣𝕚𝕗𝕖 𝕔𝕠𝕟𝕔𝕖𝕡𝕥 𝕒𝕓𝕠𝕦𝕥 𝔹𝕦𝕓𝕓𝕝𝕚𝕟𝕘 𝕥𝕙𝕖𝕠𝕣𝕪) ম্যাসচুসেটস্ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির বৈজ্ঞানিক অ্যালান গুথ (𝔸𝕝𝕒𝕟 𝔾𝕦𝕥𝕙)-এর চেষ্টা ছিল মহাবিশ্বের এমন একটি প্রতিরূপ অন্বেষণ করা, যে প্রতিরূপে বহু প্রাথমিক আকার বিবর্তনের ফলে আধুনিক মহাবিশ্বের মতো একটি জিনিস সৃষ্টি হয়েছে । গুথের এই আলোচনা থেকে বুঝা যায় মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে বহু প্রাথমিক আকার থেকে পরবর্তীতে সেই প্রাথমিক আকারগুলি বিবর্তনে মাধ্যমে বর্তমান মহাবিশ্বের সৃষ্টি করেছে । গুথের এই ধারণা বুদবুদ তত্ত্বের জন্ম দিয়াছে । মহাবিশ্বের যে প্রাথমিক অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন ছিল, সেটা ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে প্রতিটি বুদবুদ বিবর্তনেরর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ব্রহ্মান্ডে পরিণত হয় । সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানী গুথের ধারণা ভাগবতের ধারণার সাথে মিল আছে । গুথের বুদবুদ তত্ত্বটি হল ফুটন্ত পানিতে যেমন বুদবুদ উঠতে থাকে, ঠিক সেরকম সময়ের নদীতে অসংখ্য বুদবুদ সৃষ্টি হচ্ছে পরবর্তীতে এই বুদবুদগুলি মহাশূন্যে অসংখ্য বিশ্ব বা ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করছে । গুথের ধারনা বুদবুদগুলি একে অন্যের সাথে মিলিত হতে থাকে এবং সবগুলি বুদবুদ মিলিত হয়ে একটি বুদবুদে রিণত হয় যে বুদবুদের মধ্যে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে । গুথ নিজেই তাঁহার তত্ত্বের সমস্যা বর্ণনা করে বলেছেন মহাবিশ্ব এতো দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছিল যে, বুদবুদগুলি যদি আলোকের গতিতে বৃদ্ধি পায় তা হলেও এরা পরস্পর থেকে দূরে অপসারণ করতে থাকবে । সুতরাং বুদবুদ গুলি যুক্ত হতে পারবে না । এই সমস্যার সমাধান হিসেবে বিজ্ঞানী হকিং বর্ণনা করেছেন ১৯৮১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি মস্কোতে একটি কণাবাদী মহাকর্ষ (ℚ𝕦𝕒𝕟𝕥𝕦𝕞 𝔾𝕣𝕒𝕧𝕚𝕥𝕪) সম্পর্কীয় আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছিলেন । শ্রোতাদের ভিতরে মস্কোর লেবেডভ ইন্সিটিটিউটের একজন তরুণ রুশ ছিলেন, তাহার নাম আন্দ্রে লিন্ডে (𝔸𝕟𝕕𝕣𝕖𝕚 𝕃𝕚𝕟𝕕𝕖)। তিনি মন্তব্য করেছিলেন বুদবুদগুলি সংযুক্ত না হওয়ার অসুবিধা এড়ানো যায় যদি বুদবুদগুলি এতোবড় হয় যে মহাবিশ্বে আমাদের অঞ্চলটি সম্পূর্ণ একটি বুদবুদের অন্তর্ভূক্ত হয় । বিজ্ঞানীদের এই বুদবুদ তত্ত্বের সাথে ভাগবতের বুদবুদের মাধ্যমে সৃষ্টি তত্ত্বের যথেষ্ট মিল রয়েছে । গুথ বলেছেন বুদবুদগুলি সময়ের নদীতে তৈরী হয়েছে, কিন্তু ভাগবতে বর্ণনা রয়েছে বুদবুদগুলি কারণ সমুদ্রের কারণ বারীতে সৃষ্টি হয় । বিজ্ঞানীরা বুদবুদগুলি এক অন্যের সাথে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে সমস্যার কথা বলেছেন কিন্তু ভাগবতে সেই সমস্যার সমাধান করে বলেছে বুদবুদগুলি একে অন্যের সাথে মিলিত হয় না । প্রতিটি বুদবুদের মধ্যে একটি করে ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয়, যার কিছু ধারণা আন্দ্রে লিন্ডে করেছেন। সুতরাং বলা যেতে পারে বিজ্ঞানীরা বুদবুদতত্ত্বের মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মান্ড বা মহাবিশ্ব সৃষ্টির যে আংশিক ধারনা ব্যক্ত করেছেন, ভাগবত সেটা অত্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ও গঠনমূলকভাবে বর্ণনা করেছে । এখানে উল্লেখ করে রাখা ভাল যে ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে বুদবুদ তত্ত্বের মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মান্ড বা মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে আর প্রতিটি বুদবুদের মধ্যে যে ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয়েছে সেটা বিগ ব্যাঙ্গ (𝔹𝕚𝕘 𝔹𝕒𝕟𝕘) বা বৃহৎ বিষ্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে যা আমি পরবর্তীতে আলোচনা করব । কিন্তু বিজ্ঞানীরা বুদবুদ তত্ত্ব এবং বিগ ব্যাঙ্গ তত্ত্ব দুটিকে বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি প্রণালী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন । কিন্তু ভাগবতের বর্ণনা মাধ্যমে সামঞ্জস্যতা লাভ করেছে যা পরে আলোচনা করা হবে । বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করবার চেষ্টা করেছেন সবগুলি বুদবুদ মিলিত হয়ে একটি বড় বুদবুদের মত তৈরী হয়, যার মধ্যে বিশ্বব্রহ্মান্ড বা মহাবিশ্ব অবস্থিত অর্থাৎ মহাবিশ্ব একটি গোলাকার বলের মধ্যে অবস্থিত বা মহাবিশ্বের একটি গোলক রয়েছে । এই বিষয়টি ভাগবতে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে মহাবিশ্ব একটি গোলকের মধ্যে অবস্থিত । মহাবিশ্ব যেহেতু একটি গোলকের মধ্যে অবস্থিত, সেজন্য মহাবিশ্বের স্থানের সীমা রয়েছে আবার ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে ব্রহ্মান্ডের সংখ্যা অনন্তকোটি । অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডের অন্য জায়গার প্রয়োজন অনন্ত……….. তা হলে এই বিষয় দুটি পরস্পর বিরোধী হয়ে যায় । এ সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে মহাবিশ্বের গোলক এত বড় যে সেটা মানুষের পক্ষে মাপা বা ধারনা করা সম্ভব নয় । সেজন্য মানুষের কাছে মহাবিশ্বের আয়তন অসীম বলে মনে হবে কিন্তু প্রকৃত বিচারে মহাবিশ্বের একটি গোলাকার বাউন্ডরী রয়েছে ।একে মহাবিশ্বের গোলক বলে, যা বিশ্ব সৃষ্টির সময় তৈরী হয়েছে । এ গোলকের মধ্যে অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ড বুদবুদ আকার অবস্থান করছে । সুতরাং যদি বলা হয় মহাবিশ্বের আয়তন অসীম সেটাও সঠিক আবার মহাবিশ্বের আয়তন অসীম নয় সীমিত সেটাও সঠিক । একই সাথে দুটি পরস্পর বিরোধী বিষয় কিভাবে সঠিক হয় সে সম্বন্ধে ভাগবতে ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে এর নাম ‘অচিন্ত্য ভেদাভেদ তত্ত্ব’ । এই তত্ত্বের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, অচিন্ত্য মানে যা মানুষের কল্পণার বাহিরে অর্থাৎ মানুষ তার সীমিত জ্ঞান দ্বারা বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবে না । আর ভেদাভেদ শব্দের অর্থ ভেদ আছে আবার ভেদ নাই অর্থাৎ একই সাথে দুটি পরস্পর বিরোধী ধারনা সঠিক হবে । এর একটি ব্যবহারিক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যেমন- এক বিন্দু জল আর সমুদ্র এই দুটি বিষয় একটি বিচারে উভয়ে সমান, সেটা হল গুণগত দিক অর্থাৎ গুণগত দিক দিয়ে এক বিন্দু জলের মধ্যে যা আছে বিশাল সমুদ্রের মধ্যে তা আছে কিন্তু পরিমাণের দিক দিয়ে দুটি বস্তু এক নয় । কোন কোন বিজ্ঞানী মহাবিশ্বকে অসীম বলে ব্যাখ্যা করেছেন আবার কোন কোন বিজ্ঞানী মহাবিশ্বকে সসীম বা সীমিত বলে ব্যাখ্যা করেছেন, এই উভয় ধারণা ভাগবতের আলোকে সঠিক । আন্দ্রে লিন্ডে নামক একজন রুশ বিজ্ঞানী মন্তব্য করেছেন বুদবুদগুলি সংযুক্ত না হওয়ার অসুবিধা এড়ানো যায় যদি বুদবুদ গুলি এতো বড় হয় যে মহাবিশ্বে আমাদের অঞ্চলটি সম্পূর্ণ একটি বুদবুদের অন্তর্ভূক্ত হয় । ব্রহ্মান্ডগুলি কিভাবে মহাশূন্যে উথিত হয় (𝕎𝕙𝕒𝕥 𝕚𝕤 𝕥𝕙𝕖 𝕡𝕣𝕠𝕔𝕖𝕕𝕦𝕣𝕖 𝕠𝕗 𝕌𝕟𝕚𝕧𝕖𝕣𝕤𝕖) এ যাবৎ আমরা আলোচনা করে দেখলাম ব্রহ্মান্ডগুলি হাজার হাজার বছর ধরে বুদবুদের আকারে কারণ সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত আছে । আমরা জানি, বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের গোলকের অর্ধেক চিন্ময় জল দ্বারা পূর্ণ, বাকী উপরের অর্ধেক ফাঁকা মহাশূন্য । মহাবিশ্বের কোন দিক উপর আর কোন দিক নীচে সেটা নির্ণয় করা হয় চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ গ্রহ গোলক বৃন্দাবনের সাথে তুলনা করে, গোলক বৃন্দাবন সবার উপরে অবস্থিত, আমাদের মহাবিশ্ব চিন্ময় জগতের নীচে অবস্থিত । সেজন্য মহাবিশ্বের গোলকের অর্ধেক জল দ্বারা পূর্ণ অংশকে বলা হয় বিশ্বব্রহ্মান্ডের নিম্নভাগ আর উপরের ফাঁকা জায়গায় নাম উপরিভাগ । ব্রহ্মান্ডগুলি হাজার হাজার বছর কারণ সমুদ্রে নিমজ্জিত থাকবার পর মহাবিষ্ণু থেকে একটি শক্তি বাহির হয়ে প্রতিটি ব্রহ্মান্ডে প্রবেশ করেন এর নাম ‘গর্ভোদকশক্তি’ । ব্রহ্মান্ডের গোলক ১০০০ বছর কারণ সমুদ্রে থাকে । 

সোহশয়িষ্টাব্ধিসলিলে আন্ডকোশো 

নিরাত্মকঃ সাগ্রং বৈ বর্ষসাহস্রমন্ববাৎসীত্তমীশ্বরঃ (ভাগবত ৩/২০/১৫) 

অনুবাদ সেই হিরন্ময় অন্ডটি অচেতন অবস্থায় এক সহস্র বৎসরেরও অধিক কাল কারণ সমুদ্রের জলে শায়িত ছিল । তারপর ভগবান গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুরূপে তাহাতে প্রবেশ করেন । এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ব্রহ্মান্ডরূপী যে বুদবুদ সেটা অচেতন বা মৃতরূপে ১০০০ (এক হাজার) বছরের বেশি সময় কারণ সমুদ্রের জলে ছিল । তারপর সেটাকে জীবন্ত করবার জন্য ভগবানের একটি শক্তি সেই ব্রহ্মান্ডে প্রবেশ করলেন, এই শক্তির নাম ‘গর্ভোদকশক্তি’ । যখন বুদবুদ রূপ ব্রহ্মান্ডের মধ্যে শক্তি প্রবেশ করল তখন ব্রহ্মান্ডটি কার্যশীল হল । গর্ভোদক শক্তি ব্রহ্মান্ডগুলিতে প্রবেশ করবার পর এই শক্তি দুই ভাগে বিভক্ত হয় । ১। অনন্ত শক্তি ২। পরমাণু শক্তি 

ভগবানের শক্তি দুই ভাগে বিভক্ত হল একোহপ্যসৌ রচয়িতং জগদন্ডকোটিং যচ্ছক্তিরস্তি জগদন্ডচয়া যদন্তঃ অন্ডান্ত রস্থপরমাণুচয়ান্তরস্থং গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহং ভজামি ।। (ব্রহ্ম সংহিতা ৫/৩৫)

 অনুবাদ আমি পরমেশ্বর ভগবান গোবিন্দের ভজনা করি, যিনি তাঁহার এক অংশের দ্বারা প্রতিটি ব্রহ্মান্ড এবং প্রতিটি পরমাণুতে প্রবিষ্ট হইয়াছেন, এইভাবে তিনি সমগ্র সৃষ্টিতে তাঁহার অনন্ত শক্তির প্রকাশ করিয়াছেন । এই শ্লোকে ভগবানের দুইটি শক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে একটি শক্তি প্রতিটি ব্রহ্মান্ডে প্রবেশ করেছেন এর নাম অনন্ত শক্তি আর একটি শক্তি প্রতিটি পরমাণুতে প্রবেশ করেছেন এর নাম পরমাণু শক্তি । কারণ সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত ব্রহ্মান্ডগুলি যখন এইভাবে অনন্ত শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়, তখন ব্রহ্মান্ডগুলি মহাশূন্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় । কারণ সমুদ্রের জলে অবস্থানরত কোটি কোটি ব্রহ্মান্ডগুলি কার্যশীল হওয়ার পর সমুদ্রে অবস্থিত মহাবিষ্ণু যখন শ্বাস ত্যাগ করেন তখন সমস্ত ব্রহ্মান্ডগুলি অনন্তশক্তির প্রভাবে মহাশূন্যে গমন করতে থাকে ।

 ব্রহ্মান্ডগুলি মহাশূন্যে উথিত হওয়া যস্যৈকনিশ্বসিতকালমথাবলম্ব্য জীবন্তি লোমবিলজা জগদন্ডনাথাঃ বিষ্ণূর্মহান্ স ইহ যস্য কলাবিশেষো গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।। (ব্রহ্ম-সংহিতায় ৫/৪৮) 

অনুবাদ মহাবিষ্ণু বা কারণার্ণবশায়ী বিষ্ণুর একটি নিঃশ্বাসের মাধ্যমে অনন্ত ব্রহ্মান্ড সমূহ প্রকাশিত হয়, আর সেই মহাবিষ্ণু হইতেছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোবিন্দের একটি অংশ মাত্র । এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে অনন্ত ব্রহ্মান্ড সমূহ মহাবিষ্ণুর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে মহাশূণ্যে গমন করছে । মহাশূন্যে ব্রহ্মান্ডপূঞ্জ বা ছায়া পথগুলি যাওয়ার পর মহাবিষ্ণুর শ্বাস ত্যাগের শক্তিতে অপসরণ হওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমস্ত মহাশূন্যে স্থান দখল করে, এর নাম মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ । একে বিজ্ঞানীরা প্রসারমান মহাবিশ্ব (𝔼𝕩𝕡𝕒𝕟𝕕𝕚𝕟𝕘 𝕌𝕟𝕚𝕧𝕖𝕣𝕤𝕖) বলে । পরবর্তী পোষ্টে আলোচনা করা হবে ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ । (চলবে………)

0 Response to "৩.ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য -পর্ব ০৩"

Post a Comment

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel