🌿 পবিত্র বেদে সাত ধরণের মাতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে । তারা হলেন:
(১) বেদ মাতা
(২) ধরণী মাতা
(৩) গো মাতা
(৪) রাণী মাতা
(৫) ব্রাহ্মণ মাতা
(৬) গুরুদেবের স্ত্রী মাতা
(৭) নিজের আপন মাতা ।
🙏 আমরা কিন্তু আমাদের আপন জন্মধাত্রী মায়ের দুধ পান করতে পারি কিন্তু তাই বলে কি আপন মায়ের মাংস ভক্ষন করতে পারি ? না কখনই পারিনা । শাস্ত্র মতে এই ৭ জন মাতার মধ্যে গো মাতা একজন। তাই আমরা গো মাতার দুধ পান করতে পারি কিন্তু মাংস ভক্ষন করতে পারিনা।
🙏 ➡👉বেদে গাভীর মহত্ব ও নিরাপত্তা- আমাদের সনাতন ধর্মে গাভীর স্থান উচ্চ পর্যায়ে। বেদে গাভীকে পৃথিবীসম বলা হয়েছে। একটি শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মায়ের দুধের পর গোদুগ্ধই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার জীবনে সর্বোচ্চ গো প্রেম দেখিয়েছেন। গাভীর প্রতি তার স্নেহ ছিলো অপরিসীম।
( অথর্ববেদ ৪/২১/৫ )🙏🙏🙏 যুযং গাবো মেদয়থা কৃশং চিদশ্রীবং চিৎ কৃণাথা সুপ্রতীকম্ । ভদ্রং গৃহং কৃণথ ভদ্রবাচো বৃহদ্ধো বয় উচ্যতে সভাসু ।। পদার্থ: ( য়ুযং গাবঃ ) ধেনু সকল! তোমরা ( কৃশম ) কৃশ মনুষ্যকে ( মন্দয়থা ) হৃষ্ট পুষ্ট করো ( অঃশ্রীবং চিৎ ) বিশ্রী মনুষ্যকে ( সুপ্রতীকম ) সুশ্রী করো ( গৃহম ) গৃহকে ( ভদ্রম ) মঙ্গলময় ( কৃণথ ) করো ( ভদ্রবাচঃ ) সুশব্দ যুক্ত ধেনু সকল ( সভাসু ) সভা সমূহে ( বাঃ ) তোমাদের ( বৃহৎ বয় ) বহু বর্ণনা ( উচ্যতে ) করা হয়।
( ঋগবেদ ৮/১০১/১৫ ) প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগা মদিতিং বধিষ্ট ।। পদার্থ: ( চিকিতুষে জনায় প্রবোচম ) জ্ঞানবান পুরুষের নিকট আমি বলেতেছি যে ( অনাগা ) নিরপরাধ ( অদিতিম ) অহিংস পৃথিবী সদৃশ ( গ্রাম ) গাভীকে ( মা বধিষ্ঠ ) হত্যা করিও না। তাছাড়া ঋগবেদে গো হত্যা কে মানুষ হত্যার সমকক্ষ বলা হয়েছে।
( অথর্ববেদ ১/১৬/৪ ) যদি নো গাং হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম। তং ত্বা সীসেন বিধ্যামো যথা নোহসো অবীরহা।। পদার্থ: ( যদি নঃ গাম হংসি ) যদি আমাদের গাভীকে হিংসা করো ( যদি অশ্বম ) যদি অশ্বকে ( যদি পুরুষম ) যদি মনুষ্যকে হিংসা করো ( তং ত্বা ) তবে তোমাকে ( সীসেন ) সীসক দ্বারা ( বিধ্যাম ) বিদ্ধ ( ছিদ্র করা হয়েছে এমন, আঘাতপ্রাপ্ত ) করিব ( যথা ) যাহাতে ( নাঃ ) আমাদের মধ্যে ( অবীরহা অস ) বীরদের বিনাশক কেহ না থাকে।
( যজুর্বেদ ১২/৭৩ ) তোমরা অবাধ্য গাভীগনকে মুক্ত করো। এখানে অবাধ্য মানে যাকে হত্যা করা যায় না। ➡️ বেদে পশুদের হত্যা নয়, রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে- বেদ মানব সভ্যতার সর্বোচ্চ গ্রন্থ। মনুষ্য জীবনের প্রতিটি কর্যকলাপের সঠিক দিক নির্দেশনা সম্বলিত এক পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান। অহিংসা, সত্য, উদার এবং মহত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার উপদেশ বেদ আমাদের দিয়েছে। বেদ আমাদের কখনোই নিরীহ প্রাণীদের হত্যা করার শিক্ষা দেয় না। কারণ বেদেই স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে- ( অথর্ববেদ ১০/১/২৯ ) "অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে" অর্থাৎ হে হিংসক্রিয়ে, নিরপরাধ এর হত্যা নিশ্চিতভাবে ভয়ংকরপ্রদ। অতএব নিরাপরাধ পশুদের নিরন্তর রক্ষা করো।
যজুর্বেদ ১৩ অধ্যায়ের ৪৭- ৫০ নং মন্ত্রগলোতে এটা আরো স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- ( যজুর্বেদ ১৩/৪৭ ) "হে হাজারো প্রকার দৃষ্টিযুক্ত রাজন! তুমি সুখ প্রাপ্ত করার জন্য নিরন্তন বুদ্ধি হয়ে এই দ্বিপদী মনুষ্য এবং চতুষ্পদী পশু কে মেরো না। হে জ্ঞানবান! তুমি পবিত্র অন্ন উৎপন্ন কারী বন্য পশু কে প্রেম করো, তাদের বৃদ্ধি প্রার্থনা করো। এবং তাদের বৃদ্ধি দ্বারা নিজ সম্পদ বৃদ্ধি হয়ে নিজ শরীর মধ্যে হৃষ্ট পুষ্ট হয়ে স্থির হও। তোমার সন্তাপকারী ক্রোধ বা তোমার পীড়া, হিংসক বন্য পশুর প্রাপ্ত হোক। এবং যাদের আমরা প্রীতি করি না, তাদের তোমার সন্তাপকারী ক্রোধ বা পীড়া প্রাপ্ত হোক। ( অনুবাদ: জয়দেব শর্মা )
( যজুর্বেদ ১৩/৪৮ ) হে পুরুষ! এই হর্ষ ধ্বনি কারী, যা সব প্রকার কষ্ট সহনের সামর্থ্য এক ক্ষুরযুক্ত বেগবান, যা সংগ্রামপযোগী পশুদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক বেগবান অশ্ব,গাধা, খচ্চর আদি পশু কে মেরো না। জঙ্গলে গৌর নামক পশু কে লক্ষ্য করে তোমাকে আমি এই উপদেশ করছি যে, তাদের বৃদ্ধিতে তুমি নিজেকেও বৃদ্ধি করে নিজ শরীর কে রক্ষা করো। তোমার শোক, সন্তাপ বা ক্রোধ সেই গৌর নামক ক্ষেতের হানিকারক মৃগের প্রাপ্ত হোক। যাদের প্রতি আমাদের প্রীতি নেই, তোমার শোক সন্তাপ বা ক্রোধ তাদের প্রাপ্ত হোক।
( অনুবাদ: জয়দেব শর্মা ) ( যজুর্বেদ ১৩/৪৯ ) আকাশ অন্তরীক্ষের মধ্যে বিবিধ প্রকারে বিস্তার কারী শত ধারা বর্ষনকারী আশ্রয়, সোমরূপ মেঘের সমান লোক মধ্যে বিদ্যমান শতজনের ধারক পোষক এবং হাজারো সুখপ্রদ পদার্থের উৎপাদক এই বৃষ কে এবং মনুষ্যের হিতের জন্য ঘী, দুগ্ধ, অন্ন আদি পুষ্টিকারক পদার্থ প্রদানকারী অহিংসনীয়, পৃথিবী সমান গাভী কে, হে রাজন! আপন সর্বোৎকৃষ্ট স্থান মধ্যে বা আপন রক্ষন কার্যের মধ্যে তৎপর হয়ে মেরো না। তোমাকে আমি বন্য পশু গবয় ( গরুর মতো গলকম্বলহীন পশুবিশেষ ) এর উপদেশ করি। উহা দ্বারা নিজ ঐশ্বর্য কে বৃদ্ধি করে নিজ শরীরকে স্থির করো। তোমার শোক সন্তাপ বা ক্রোধ "গবয়" নামক পশুর প্রাপ্ত হোক। এবং যেই শত্রুকে আমরা দ্বেষ করি, তোমার সন্তাপ এবং পীড়াদায়ক ক্রোধ তাহার প্রাপ্ত হোক।
( অনুবাদ: জয়দেব শর্মা ) ( যজুর্বেদ ১৩/৫০ ) হে রাজন! তুমি পরম সর্বোচ্চ "ব্যোম" অর্থাৎ বিবিধ প্রাণীদের রক্ষাধিকারে নিযুক্ত হয়ে সর্ব জগতের রচয়িতা পরমেশ্বর কে প্রজাদের সবার উত্তম বা সবার আদি উৎপাদক কারণ, মেঘের সমান সুখের উৎপাদক, বরুন অর্থাৎ বরণ করার যোগ্য সুখের মূল কারণ দ্বিপদী এবং চতুষ্পদী ( চার পা বিশিষ্ট ) পশুদের মধ্যে শরীরকে লোম আদি দ্বারা আবৃতযুক্ত এই "ঊর্নায়" উল প্রদানকারী মেষ আদি জীবকে মেরো না। তোমাকে আমি বন্য উট এর উপদেশ করি। উহা দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে শরীরের সুখকে প্রাপ্ত করো। তোমার পীড়াজনক প্রবৃত্তি, দাহকারী পীড়দায়ক জীবের প্রাপ্ত হোক। এবং তোমার দুঃখদায়ী ক্রোধ তাহার প্রাপ্ত যাদের আমরা দ্বেষ করি। ( অনুবাদ: জয়দেব শর্মা ) উপরিউক্ত মন্ত্রগুলি দ্বারা এটা স্পষ্ট যে, বেদ কোনো নির্দোষ পশু কে হত্যার উপদেশ দেয় না বরং উপদেশ করেছে, পশুস্ত্রাঁয়েথাঙ ( যজুর্বেদ ৬/১১ ) অর্থাৎ পশুদের রক্ষা করো এবং তাদের বর্ধিত করো। কারণ পবিত্র বেদ সর্বদাই কল্যাণময় ও মঙ্গলময়।
0 Response to "পবিত্র বেদে সাত ধরণের মাতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে........."
Post a Comment