শ্রীকৃষ্ণ কি একজন যোগী নাকি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান ?

Krishner Das

1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

 জয় শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ।হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।[ হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হুইন ]-শ্রীল প্রভুপাদ

হরে কৃষ্ণ

🙏হরে কৃষ্ণ🙏জপ করুন সুখী হউন

শ্রীকৃষ্ণ কি একজন যোগী নাকি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান ?

শ্রীকৃষ্ণ কি একজন যোগী নাকি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান ?


শ্রীকৃষ্ণ কি একজন যোগী নাকি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান




 কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং

 শ্রীকৃষ্ণ কি একজন যোগী নাকি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান। এ ব্যাপারে শাস্ত্র কি বলে - - - - (বিষ্ণুপুরাণ ৬/৫/৭৮)----- উৎপত্তি প্রলয়ং চৈব ভূতানামাগতিং গতিম্। বেত্তি বিদ্যামবিদ্যাং চ স বাচ্যো ভগবানিতি।। ‘ যিনি সমস্ত প্রাণিকুলের উৎপত্তি, বিনাশ এবং আগমন - নির্গমন ও বিদ্যা-অবিদ্যাকে জানেন, তিনিই ভগবান নামে অভিহিত। ‘ ‘ভগ’ শব্দের অর্থ ছয়টি ঐশ্বর্য, এবং ‘বান’ শব্দের অর্থ সমন্বিত। তিনিই ভগবান যিনি পূর্ণ রূপে ছয়টি ঐশ্বর্য বা ষড়ৈশ্বর্য সমন্বিত। ছয়টি ঐশ্বর্য হচ্ছে :- ১। ঐশ্বর্য বা ধনসম্পত্তি ২। বীর্য বা বলবত্তা ৩। সমগ্র যশ ৪। শ্রী বা সৌন্দর্য ৫। সমগ্র জ্ঞান ৬।সমগ্র বৈরাগ্য। কিন্তু এগুলো মানুষ বা দেবতা কারো মধ্যে পূর্ণমাত্রায় নেই। এই ছয়টি ঐশ্বর্য একমাত্র শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-------- ‘কল্পের প্রারম্ভে প্রকৃতির দ্বারা আমি সমস্ত জড় সৃষ্টি করি এবং মহাপ্রলয়ে সমস্ত সৃষ্টিই আমার প্রকৃতিতে প্রবেশ করে। এই জগৎ আমারই প্রকৃতির অধীন। প্রকৃতির বশে আমার ইচ্ছায় পুনঃপুনঃ সৃষ্টি হয় এবং অন্তকালে বিনষ্ট হয়’ (৯/৭-৮)। ‘ আমি সমস্ত জীবসমূহের অতিত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অবহিত আছি, কিন্তু আমাকে কেউ জানে না’ (৭/২৬)। ‘আমি অব্যক্তরূপে সমস্ত জগতে পরিব্যাপ্ত এবং সমস্ত জীব আমাতেই স্হিত, কিন্তু আমি তাতে স্হিত নই। যদিও আমি সমস্ত জীবের ধারক এবং সর্বব্যাপ্ত তবুও আমি জড় সৃষ্টির অন্তর্গত নই, কারন আমি নিজেই সমস্ত সৃষ্টির উৎস’ (৯/৪-৫), এই বিদ্যাই রাজবিদ্যা। ‘আসুরী ভাবাপন্ন মূঢ় নরাধম যাদের জ্ঞান মায়ার দ্বারা অপহৃত হয়েছে তারা আমার শরণাগত হয় না’ (৭/১৫), এই হচ্ছে অবিদ্যা। অতএব, বিদ্যা এবং অবিদ্যা সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ সম্পূর্ণভাবে অবগত। সমস্ত সৃষ্টির উৎপত্তি ও প্রলয়, গমনাগমন এবং বিদ্যা-অবিদ্যাকে জানেন বলেই তিনি স্বয়ং ভগবান। দশম অধ্যায়ের ২০নং শ্লোক থেকে ৩৯নং শ্লোক পর্যন্ত ভগবান নিজ বিভূতির প্রকাশ করেছেন। আবার একাদশ অধ্যায়ে অর্জুনকে দিব্য দৃষ্টি দিয়ে তাঁর অব্যয়, অবিনাশী, দিব্য, বিরাট বিশ্বরূপ দেখিয়েছেন। এই অত্যুগ্র বিরাটরূপ দেখে অর্জুন ভীত হলে ভগবান তাঁর চতুর্ভুজরূপ দেখিয়ে অর্জুনকে সান্তনা প্রদান করেন এবং পরে আবার দ্বিভুজরূপে ফিরে আসেন। অনেকেই বলে থাকেন শ্রীকৃষ্ণ যোগাবস্হায় বিশ্বরূপ দেখিয়েছেন তাই তিনি একজন মহাপুরুষ বা যোগী। এটা সঠিক নয় কারন তিনি বিশ্বরূপ দেখিয়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে, যোগাসনে বসে নয় এবং যুদ্ধক্ষেত্রে যোগাসনে বসার অবকাশ নেই। যোগীর শক্তি সাধনা দ্বারা লব্ধ, অতএব তা সীমিত, অপরপক্ষে ভগবানের শক্তি স্বতঃসিদ্ধ, তাই তা অসীম। শ্রীকৃষ্ণ যদি যোগীও হন তাহলে তিনি সত্য বলেন, কারন সত্য বলা যোগের আটটি অঙ্গের প্রথম অঙ্গের একটি। তাই শ্রীকৃষ্ণকে যোগী বললে তাঁকে ভগবান বলেও মানতে হয়। কেননা শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং নিজেকে সর্বভূতের ঈশ্বর, জগৎ সংসারের অধীশ্বর বলেছেন। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে ভগবান বলে ব্যক্ত করেছেন। যেমন — 'আমি সর্বভূতের ঈশ্বর হয়েও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আদি চিন্ময়রূপে আবির্ভূত হই’ (৪/৬)। ‘আমি সমস্ত জীবের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত। আমিই সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য, বেদান্ত কর্তা ও বেদবিৎ’ (১৫/১৫)। ‘যে সমস্ত অবিবেকি ব্যক্তি দম্ভ, অহংকার, কামনা, আসক্তি এবং বলগর্বিত হয়ে শাস্ত্রবিরুদ্ধ কঠোর তপস্যা করে, তারা নিজ পঞ্চভূতবিশিষ্ট দেহ তথা অন্তঃকরনে স্হিত আমাকেও কষ্ট দেয়, তাদের আসুরিক বলে জানবে ‘(১৭/৫-৬)। ‘যিনি আমাকে সর্বলোকের মহান ঈশ্বর বলে মানেন, তিনি পরম শান্তি লাভ করেন’ (৫/২৯)। 'যিনি আমাকে অজ, অবিনাশী, মহান ঈশ্বর বলে মানেন, তিনি মোহ ও সকল পাপ হতে মুক্ত হন’ (১০/৩)। ‘কিন্তু আমার ঈশ্বর ভাব না জেনে যারা আমাকে মানুষ ভেবে অবহেলা করে তারা মূঢ়’ (৯/১১)। ‘যারা আমাকে সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা তথা সমস্ত জগৎ সংসারের অধীশ্বর বলে মানে না, তাদের পতন অনিবার্য’ (৯/২৪)। ‘যে জ্ঞেয়-তত্ত্বকে জানলে অমরত্ব প্রাপ্তি হয়, আমিই সেই জ্ঞেয়-তত্ত্ব (১৩/১৩), কারন সমস্ত বেদ জ্ঞাতব্য যে তত্ত্ব তা আমিই’ (১৫/১৫)। ‘আমি এই জগৎ সংসারের সৃষ্টিকর্তা। এই জগৎ সংসার আমিই রচনা করি। আমি ব্যতিত এই সৃষ্টির রচনাকারী আর কেউ নেই। সূত্রে যেমন মনিসমূহ গাঁথা থাকে, তেমনি সমস্ত বিশ্বই আমাতে ওতঃপ্রোতভাবে অবস্থান করে’ (৭ /৬-৭) । ‘সাত্বিক, রাজসিক ও তামসিক ভাব আমা হতেই জাত’ (৭/১২)।’ যা সর্ব ভূতের বীজস্বরূপ তাও আমি, যেহেতু আমাকে ছাড়া স্হাবর ও জঙ্গম কোন কিছুরই অস্তিত্ব থাকতে পারে না’ (১০ /৩৯)। ‘এই সমস্ত জগৎ আমার একাংশেই স্হিত’ (১০/৪২)। ‘আমি নিজ প্রকৃতিকে বশীভূত করে এই জগৎ সৃষ্টি করি’ (৯/৮),’আমার অধ্যক্ষতায় জড়া প্রকৃতি এই চরাচর বিশ্ব সৃষ্টি করে’ (৯/১০)। ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ। অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্।। শ্রীব্রহ্মা বলেছেন, "শ্রীকৃষ্ণ যিনি গোবিন্দ নামে পরিচিত তিনিই পরম ঈশ্বর। তার রূপ সৎ, চিৎ ও আনন্দময়। তিনি অনাদির আদি পুরুষ। তাঁর আদি আর কেউ নেই নেই এবং তিনিই সর্বকারণের পরম কারণ।" (ব্রহ্মসংহিতা ৫/১) বেদে সর্বদেবতার উপাস্য ভগবান রূপে শ্রীবিষ্ণুকে স্তুতি করা হয়েছে, যেমন ঋগবেদে (১/২২/২০) বলা হয়েছে, "ওঁ তদবিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা, পশ্যন্তি সূরয়ো দিবীব চক্ষুরাততম। তদবিপ্রাসো বিপন্যবো জাগৃবাংষঃ, সমিন্ধতে বিষ্ণোর্যৎ পরমং পদম।।" "পরমেশ্বর বিষ্ণুই হচ্ছেন পরম সত্য, সুরগন তাঁর পাদপদ্ম দর্শনে সর্বদাই উদগ্রীব, সূর্যের মতোই ভগবান তাঁর শক্তিরশ্মির বিস্তার করে সর্বত্র ব্যাপ্ত আছেন। ভগবদগীতায় শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু বলে সম্বোধন করা হয়েছে। "শমং চ বিষ্ণো" (গী ১১/২৪), প্রতপন্তি বিষ্ণো(১১/৩০), আদিত্যানাম অহং বিষ্ণু (১০ /২১) ইত্যাদি। শ্রীকৃষ্ণই শ্রীবিষ্ণুরূপে সর্বজীবের অন্তরস্থিত পরমাত্মা অহমাত্মা গূঢ়াকেশ সর্বভূতাশয়স্থিতঃ (১০/২০)। বিষ্ণুমূর্তি-সমূহ, রাম-নৃসিংহ ইত্যাদি অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণরই প্রকাশ, অংশ, কলা। শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান “এতে চাংশকলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ম্। ইন্দ্রারিব্যাকুলং লোকং মৃড়য়ন্তি যুগে যুগে।” (ভাঃ১/৩/২৮ ) । যখন নাস্তিকদের অত্যাচার বেড়ে যায়, তখন আস্তিকদের রক্ষা করার জন্য তিনি এই ধরাধামে অবতীর্ণ হন। শ্রীকৃষ্ণের রাজত্বকালে তাঁকে কেউই পরমেশ্বর ভগবান বলে চিনতে পারেননি। তবে চিনতে পেরেছিলেন শুধু একজন তিনি ভীষ্মদেব। আর কৃষ্ণ নিজে প্রকাশিত হয়েছিলেন এবং বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন শুধু অর্জুনকে। গীতার জ্ঞান প্রকাশিত হওয়ার পরই আজ এই কলিযুগের মানুষেরা তাঁকে ভগবান বলে চিনতে পেরেছে। হরে কৃষ্ণ ।।

0 Response to "শ্রীকৃষ্ণ কি একজন যোগী নাকি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান ?"

Post a Comment

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel