হরেকৃষ্ণ
বৈষ্ণব কে ও বৈষ্ণব ধর্ম শব্দটির অর্থ কি?
*শ্রীমৎ ভক্তি চারু স্বামী মহারাজ* “বৈষ্ণবদের আচার ও আচরণ থেকে তাঁদের চেনা যায়। বৈষ্ণবদের
বাইরের পোষাক দেখে বৈষ্ণবদের চেনা যায় না। যেমন কেউ যদি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনকে দেখে
বলে বৈষ্ণব, তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রে দেখে কি মনে হবে অর্জুন বৈষ্ণব—না। যমরাজাকে দণ্ডদান করতে
দেখে কি মনে হবে তিনি বৈষ্ণব—না। মহাদেবকে ভূত,প্রেত,পিশাচ পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতে দেখে কি
মনে হবে বৈষ্ণব—না। এইজন্য বৈষ্ণব কে চেনা কঠিন। বৈষ্ণবের রূপটি তাঁর বাইরের বেশ নয়, তাঁর
প্রকৃত রূপটি হচ্ছে তাঁর অন্তরের ভাব। সেইটি হচ্ছে বৈষ্ণবের প্রকৃত পরিচয়। অনেক বৈষ্ণব আছেন
যাদের আপাত দৃষ্টিতে তাঁদের বৈষ্ণব বলে চেনা যায় না। তার একটি অপূর্ব সুন্দর দৃষ্টান্ত হচ্ছে বিত্রাসুর
—অসুর কিন্তু তিনি বৈষ্ণব,তাঁর আচরণ দেখে আমরা সেটা বুঝতে পারছি। ইন্দ্র যখন বিত্রাসুরকে
সংহার করতে এসেছিল তাঁর বজ্র নিয়ে, ভগবানেরই নির্দেশে দধিচীর অস্থি থেকে বজ্র নির্মিত হল
বিত্রাকে সংহার করার জন্য। বজ্র নিয়ে ইন্দ্র গেছে বিত্রাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে কিন্তু সেই যুদ্ধে
বিত্রাসুর ইন্দ্রকে এমনভাবে আঘাত করল যে ইন্দ্রের ঐরাবত মূর্ছিত হয়ে গেল আর ইন্দ্রের হাত থেকে
বজ্র পরে গেল। ইন্দ্রকে তখন বিত্রাসুর কি বললেন, ইন্দ্র,এখন মূর্ছিত হওয়ার সময় নয়, বজ্র নির্মিত
হয়েছে আমাকে সংহার করার জন্য সুতরাং আমি প্রস্তুত। এইটি হচ্ছে ভক্তের মনোভাব। ভগবান যদি
আমাকে মারতে চান আমি মরে যাব—“মার ভী রাখ ভী যো ইচ্ছা তুহাঁরা”—এইটি হচ্ছে ভক্তের
মনোভাব বা বৈষ্ণবের মনোভাব। বৈষ্ণবের মনোভাব,বিশেষ করে উন্নতমার্গের বৈষ্ণবের মনোভাব এই
নয় যে ভগবান তুমি আমাকে রক্ষা কর। তাঁর মনোভাব হচ্ছে ভগবান তুমি যেটা ভালবোঝ সেটাই
করো। তুমি যদি আমাকে রক্ষা করতে চাও রক্ষা করতে পার তুমি যদি আমাকে সংহার করতে চাও
সংহার করতে পার। আমার ব্যক্তিগত কোন ইচ্ছা নেই,তোমার ইচ্ছাটাই সব। তোমার ইচ্ছার বর্শবর্তী
হয়ে থাকাটাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য। এইটি হচ্ছে বৈষ্ণবের মনোভাব। এইভাবে বিত্রাসুর প্রস্তুত
হলেন। তখন বিত্রাসুর বললেন আমি এখন আমার প্রভুর,সঙ্কর্ষণের ধ্যানে মগ্ন থেকে আমি আমার
দেহত্যাগ করবো এবং তিনি তাই করেছিলেন। সেই যুদ্ধে ইন্দ্র তাঁর বজ্র দিয়ে তাঁর ডান হাত কেটে
ফেলল,বাহাত দিয়ে বিত্রাসুর যুদ্ধ করছিল, ইন্দ্র তখন তাঁর বা হাতটি কেটে দিল,তখন সে তাঁর পা দিয়ে
যুদ্ধ করছিল। ইন্দ্র তাঁর পা দুটি কেটে দিল। তখন বিত্রাসুর ইন্দ্রকে গিলে ফেলল,বিশাল শরীর ধারণ
করে ইন্দ্রকে গিলে ফেলল। তখন ইন্দ্র সেই বজ্র দিয়ে তাঁর পেটটা কেটে বেরিয়ে এসে সেই বজ্র দিয়ে
তাঁর গলাটা কাটবার চেষ্টা করলো। এক বৎসর লাগল ঐ বজ্রের বিত্রাসূরের গলাটা কাটতে। সেই সূত্রে
শ্রীমদ্ভাগবতমে বলা হয়েছে ইন্দ্র বিত্রাসুরকে মারেনি, বিত্র ইন্দ্রাসুর কে মেরেছে। বিত্রাসুর যখন ইন্দ্রকে
গিলে ফেলল তখন বৃত্রাসুর ভাবলো যাই হোক আমার কাজ শেষ হয়ে গেছে, এবং তখন বিত্রাসুর তাঁর
শরীর ত্যাগ করে চলে গেল। ইন্দ্র যখন বিত্রাসুরের গলা কেটেছিল তখন বিত্রাসুর তাঁর শরীর থেকে চলে
গেছিল,কোথায়? সঙ্কর্ষণের কাছে। এমনই হচ্ছে বৈষ্ণবের মহিমা। অতএব বৈষ্ণব হওয়াটিই হচ্ছে
সকলের জীবনের চরম লক্ষ্য। বৈষ্ণব হওয়াটিই হচ্ছে জীবনের চরম লক্ষ্য, অন্যান্য যে সমস্ত লক্ষ্য,
সে লক্ষ্যগুলি হচ্ছে আনুষঙ্গিক বা ক্ষণস্থায়ী। বৈষ্ণব হওয়াটিই জীবনের চরম লক্ষ্য এবং বৈষ্ণব কে?
বৈষ্ণব হচ্ছে ভগবানের নিত্য দাস। আর এই জীবের স্বরূপ হচ্ছে এই ভগবানের নিত্য দাসত্ব লাভ করা
—‘‘জীবের স্বরূপ হয় কৃষ্ণের নিত্য দাস’’—কৃষ্ণের তঠস্থা শক্তির ভেদাভেদ প্রকাশ,,হরেকৃষ্ণ
0 Response to "বৈষ্ণব ..শ্রীমৎ ভক্তি চারু স্বামী মহারাজ"
Post a Comment